ডায়াবেটিস: কারণ, প্রতিকার এবং ঝুঁকি
ডায়াবেটিসের কারণ
ডায়াবেটিস হলে প্রতিকার
প্রাথমিক পর্যায়ে ওষুধ সেবন
ডায়াবেটিসের ঝুঁকি মাত্রা
১. ডায়াবেটিসের কারণ
ডায়াবেটিস একটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ যা রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যাওয়ার ফলে ঘটে। এই রোগের দুটি প্রধান ধরন আছে: টাইপ ১ এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিস।
টাইপ ১ ডায়াবেটিস: এই ধরনের ডায়াবেটিস শরীরের ইমিউন সিস্টেম ভুল করে ইনসুলিন উৎপাদনকারী কোষগুলিকে ধ্বংস করে। এর ফলে শরীর পর্যাপ্ত ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না। এই রোগটি সাধারণত শিশু বা কিশোর বয়সে শুরু হয়।
টাইপ ২ ডায়াবেটিস: এটি সবচেয়ে সাধারণ ডায়াবেটিসের ধরন। টাইপ ২ ডায়াবেটিসে শরীর ইনসুলিন তৈরি করতে পারে, কিন্তু শরীর তা ঠিকমতো ব্যবহার করতে পারে না। প্রধান কারণগুলো হল:
ওজনাধিক্য
অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস
শারীরিক কার্যকলাপের অভাব
পারিবারিক ইতিহাস
২. ডায়াবেটিস হলে প্রতিকার
ডায়াবেটিস হলে জীবনধারার কিছু পরিবর্তন করে এবং সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে তা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এখানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ দেওয়া হল:
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখতে কম শর্করা, উচ্চ ফাইবার এবং কম চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া উচিত। সবজি, ফল, পূর্ণ শস্য, এবং লীন প্রোটিন খাওয়া উচিত।
নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপ: প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটা, সাইকেল চালানো বা অন্যান্য ব্যায়াম করা উচিত।
ওজন নিয়ন্ত্রণ: স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা: নিয়মিত রক্তের শর্করা পরীক্ষা করা এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা জরুরি।
৩. প্রাথমিক পর্যায়ে ওষুধ সেবন
প্রাথমিক পর্যায়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ওষুধের ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ। কিছু সাধারণ ওষুধের নাম ও তাদের কাজ:
মেটফর্মিন (Metformin): এটি সবচেয়ে সাধারণ ওষুধ যা লিভার থেকে অতিরিক্ত গ্লুকোজ উৎপাদন কমায় এবং শরীরের ইনসুলিন ব্যবহার বাড়ায়।
সালফোনাইলইউরিয়াস (Sulfonylureas): এটি ইনসুলিন উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করে।
থিয়াজোলিডিনিডাইওন্স (Thiazolidinediones): এটি শরীরের ইনসুলিন ব্যবহার বাড়ায়।
ওষুধের মাত্রা এবং প্রয়োজনীয়তা ব্যক্তির শারীরিক অবস্থা এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নির্ধারণ করা উচিত।
৪. ডায়াবেটিসের ঝুঁকি মাত্রা
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকলে বিভিন্ন জটিলতা হতে পারে যা জীবনকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলে। কিছু প্রধান জটিলতা:
হৃদরোগ এবং স্ট্রোক: উচ্চ রক্তের শর্করা হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।
কিডনি সমস্যা: ডায়াবেটিস কিডনির ক্ষতি করতে পারে, যা কিডনি ফেলিওরের কারণ হতে পারে।
দৃষ্টি সমস্যা: ডায়াবেটিসের কারণে চোখের রেটিনা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, যা অন্ধত্বের কারণ হতে পারে।
পায়ের সমস্যা: ডায়াবেটিসের কারণে স্নায়ুর ক্ষতি এবং রক্ত সঞ্চালনের সমস্যা হতে পারে, যা পায়ের ক্ষত এবং সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়।
রক্তে শর্করার মাত্রা যদি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় (সাধারণত ৩০০ mg/dL এর বেশি), তবে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা প্রয়োজন।
৫. উপসংহার
ডায়াবেটিস একটি গুরুতর কিন্তু নিয়ন্ত্রণযোগ্য রোগ। সঠিক জীবনধারা, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপ, এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক। প্রাথমিক অবস্থায় ডায়াবেটিস সনাক্ত করা গেলে তা আরও ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। সুতরাং, সুস্থ জীবনযাপনের জন্য সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করুন এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করুন।